০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

নাগপুরে হিন্দু-মুসলমান সহিংসতা: ৬৫ জন আটক

  • আপডেট সময়: ০৬:২৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
  • 49

মহারাষ্ট্রের নাগপুরে হিন্দু-মুসলমান সহিংসতার দুদিন পরে এখনও কারফিউ জারি রয়েছে। সহিংসতার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৬৫ জনকে।

অন্যদিকে যে শহরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইতিহাস নেই, সেখানে কীভাবে এরকম একটা ঘটনা ঘটে গেল, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না নাগপুরের হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ।

সংবাদ সংস্থা এএনআই এবং পিটিআই জানিয়েছে যে নাগপুর শহরের দশটি থানা এলাকায় এখনও কারফিউ জারি করে রেখেছে পুলিশ।

অন্যদিকে সোমবার রাত থেকে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল সেখানে, তার প্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, অস্ত্র আইন, জন-সম্পত্তি ক্ষতিসাধন রোধ আইনসহ বিভিন্ন আইনের ধারায় ওই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

এফআইআরে ৫১ জনের নাম করে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নাবালক আছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।

তারা জানিয়েছে যে অভিযুক্তরা মূলত শহরের জাফর নগর, তাজবাগ, মোমিনপুরা এবং ভালাদাপুরা অঞ্চলের বাসিন্দা।

পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে যে মূল চক্রান্তকারীকে হিসেবে ফাহিম খান নামে এক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার উসকানিমূলক ভাষণের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতেই বুধবার দুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে।

শহরের দশটি থানা এলাকায় বুধবারও কারফিউ জারি

নারী পুলিশের ওপরে হামলা

পুলিশের দায়ের করা এফআইআর থেকে উদ্ধৃত করে এএনআই জানিয়েছে, “পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে পাথর আর পেট্রল বোমা ছোঁড়ার পরেই বিক্ষোভটি সহিংস হয়ে ওঠে। পুলিশ বারবার সতর্ক করলেও ওই জমায়েত থেকে সহিংসতা চালানো হতে থাকে, যার ফলে পুলিশ কর্মী ও বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়ে পড়ে।”

অন্ধকারের সুযোগ নারী পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় এবং তাদের গায়ে হাত দেওয়া হয়। অশালীন অঙ্গভঙ্গিও করা হয় নারী পুলিশ কর্মী-অফিসারদের কয়েকজনের উদ্দেশে, এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।

নাগপুর শহরে যা দেখল বিবিসি

সোমবার রাতের সহিংসতার পরে কেমন আছে শহর – তা দেখতে নাগপুরের নানা এলাকায় ঘুরেছেন বিবিসি সংবাদদাতা ভাগ্যশ্রী রাউত। তিনি জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় সহিংসতা হয়েছিল, সেখানে এখন পরিস্থিতি শান্ত। তবে দোকানপাট বন্ধ। চারদিকেই পুলিশের পাহারা আছে।

তবে সহিংসতার চিহ্ন চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

কোনো দোকানের জানালা ভেঙে ঝুলছে। আবার কোথাও পাথর আর ইঁটের টুকরা জড়ো করে রাখা আছে। যেসব গাড়ি বা বাইক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে জনতা, সেইসব গাড়ির কঙ্কাল পড়ে আছে রাস্তার পাশে।

এর মধ্যে বসেই শহরের কয়েকজন সাধারণ মানুষ বিবিসিকে বলেছেন যে নাগপুর শহর আগে কখনো এরকম সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেখেনি।

সহিংসতায় জ্বালিয়ে দেওয়া একটি ক্রেন

কী বলছেন সাধারণ মানুষ?

ভাগ্যশ্রী রাউত কথা বলেছেন হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে।

মুসলমান প্রধান একটি এলাকার বাসিন্দা পেশায় উকিল রাকেশ দাভরিয়া বলছিলেন, “এই শহরের জন্য এটা আশ্চর্যজনক দৃশ্য, কিছু বুঝতেই পারছি না। দোকান খোলা আছে অথচ খদ্দের নেই। সবাই কি সেদিন দেশের আইনকানুন ভুলে গিয়েছিল? ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক ভুলে গেল সবাই?”

আব্দুল খালেক (বাঁয়ে), কুণ্ডা যাদব (ডানে)

“চারশো বছর আগে এক সম্রাট না হয় কিছু একটা করেছিলেন। কিন্তু আমরা তো থাকি বর্তমানে। আমার মুসলমানদের সঙ্গে ব্যবসা করি। আমাদের বাচ্চারা ওদের বাচ্চাদের সঙ্গে পড়াশোনা করে। তো তাদের ক্ষতি করে তো আমরা নিজেদেরই ক্ষতি করছি,” বলছিলেন মি. দাভরিয়া।

আবার চিটনিস পার্কের কাছে দোকান মালিক আব্দুল খালেক তো কথা বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন।

তিনি বলছিলেন, “আমি তো আমার জীবনেও এরকম কোনো ঘটনা দেখিনি। আমাদের শহরে তো এরকম ঘটনা হয় না। দেশের অন্যান্য শহরে যাই হোক না কেন এখানে কোনো প্রভাব পড়ে না কখনো। সেদিন রাতের সহিংসতার পর থেকে আমার দোকান বন্ধ।

“রোজা রাখার পরে সন্ধ্যায় মসজিদে গিয়েছিলাম। ফেরার সময়ে দেখি চারদিকে সহিংসতা শুরু হয়ে গেছে,” বলছিলেন মি. খালেক।

শহরবাসী এক নারী কুণ্ডা যাদব বিবিসিকে বলেছেন যে সহিংসতার সময়ে বাড়িতে শুধু নারীরাই ছিলেন। তাদের বাড়িতে পাথর ছোঁড়া হয়েছে, কাঁচের বোতল ছোঁড়া হয়েছে।

“ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম ওই সময়টায়,” জানাচ্ছিলেন মিজ. যাদব। বিবিসি

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

নাগপুরে হিন্দু-মুসলমান সহিংসতা: ৬৫ জন আটক

আপডেট সময়: ০৬:২৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

মহারাষ্ট্রের নাগপুরে হিন্দু-মুসলমান সহিংসতার দুদিন পরে এখনও কারফিউ জারি রয়েছে। সহিংসতার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৬৫ জনকে।

অন্যদিকে যে শহরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইতিহাস নেই, সেখানে কীভাবে এরকম একটা ঘটনা ঘটে গেল, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না নাগপুরের হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ।

সংবাদ সংস্থা এএনআই এবং পিটিআই জানিয়েছে যে নাগপুর শহরের দশটি থানা এলাকায় এখনও কারফিউ জারি করে রেখেছে পুলিশ।

অন্যদিকে সোমবার রাত থেকে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল সেখানে, তার প্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, অস্ত্র আইন, জন-সম্পত্তি ক্ষতিসাধন রোধ আইনসহ বিভিন্ন আইনের ধারায় ওই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

এফআইআরে ৫১ জনের নাম করে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নাবালক আছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।

তারা জানিয়েছে যে অভিযুক্তরা মূলত শহরের জাফর নগর, তাজবাগ, মোমিনপুরা এবং ভালাদাপুরা অঞ্চলের বাসিন্দা।

পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে যে মূল চক্রান্তকারীকে হিসেবে ফাহিম খান নামে এক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার উসকানিমূলক ভাষণের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতেই বুধবার দুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে।

শহরের দশটি থানা এলাকায় বুধবারও কারফিউ জারি

নারী পুলিশের ওপরে হামলা

পুলিশের দায়ের করা এফআইআর থেকে উদ্ধৃত করে এএনআই জানিয়েছে, “পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে পাথর আর পেট্রল বোমা ছোঁড়ার পরেই বিক্ষোভটি সহিংস হয়ে ওঠে। পুলিশ বারবার সতর্ক করলেও ওই জমায়েত থেকে সহিংসতা চালানো হতে থাকে, যার ফলে পুলিশ কর্মী ও বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়ে পড়ে।”

অন্ধকারের সুযোগ নারী পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় এবং তাদের গায়ে হাত দেওয়া হয়। অশালীন অঙ্গভঙ্গিও করা হয় নারী পুলিশ কর্মী-অফিসারদের কয়েকজনের উদ্দেশে, এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।

নাগপুর শহরে যা দেখল বিবিসি

সোমবার রাতের সহিংসতার পরে কেমন আছে শহর – তা দেখতে নাগপুরের নানা এলাকায় ঘুরেছেন বিবিসি সংবাদদাতা ভাগ্যশ্রী রাউত। তিনি জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় সহিংসতা হয়েছিল, সেখানে এখন পরিস্থিতি শান্ত। তবে দোকানপাট বন্ধ। চারদিকেই পুলিশের পাহারা আছে।

তবে সহিংসতার চিহ্ন চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

কোনো দোকানের জানালা ভেঙে ঝুলছে। আবার কোথাও পাথর আর ইঁটের টুকরা জড়ো করে রাখা আছে। যেসব গাড়ি বা বাইক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে জনতা, সেইসব গাড়ির কঙ্কাল পড়ে আছে রাস্তার পাশে।

এর মধ্যে বসেই শহরের কয়েকজন সাধারণ মানুষ বিবিসিকে বলেছেন যে নাগপুর শহর আগে কখনো এরকম সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেখেনি।

সহিংসতায় জ্বালিয়ে দেওয়া একটি ক্রেন

কী বলছেন সাধারণ মানুষ?

ভাগ্যশ্রী রাউত কথা বলেছেন হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে।

মুসলমান প্রধান একটি এলাকার বাসিন্দা পেশায় উকিল রাকেশ দাভরিয়া বলছিলেন, “এই শহরের জন্য এটা আশ্চর্যজনক দৃশ্য, কিছু বুঝতেই পারছি না। দোকান খোলা আছে অথচ খদ্দের নেই। সবাই কি সেদিন দেশের আইনকানুন ভুলে গিয়েছিল? ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক ভুলে গেল সবাই?”

আব্দুল খালেক (বাঁয়ে), কুণ্ডা যাদব (ডানে)

“চারশো বছর আগে এক সম্রাট না হয় কিছু একটা করেছিলেন। কিন্তু আমরা তো থাকি বর্তমানে। আমার মুসলমানদের সঙ্গে ব্যবসা করি। আমাদের বাচ্চারা ওদের বাচ্চাদের সঙ্গে পড়াশোনা করে। তো তাদের ক্ষতি করে তো আমরা নিজেদেরই ক্ষতি করছি,” বলছিলেন মি. দাভরিয়া।

আবার চিটনিস পার্কের কাছে দোকান মালিক আব্দুল খালেক তো কথা বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন।

তিনি বলছিলেন, “আমি তো আমার জীবনেও এরকম কোনো ঘটনা দেখিনি। আমাদের শহরে তো এরকম ঘটনা হয় না। দেশের অন্যান্য শহরে যাই হোক না কেন এখানে কোনো প্রভাব পড়ে না কখনো। সেদিন রাতের সহিংসতার পর থেকে আমার দোকান বন্ধ।

“রোজা রাখার পরে সন্ধ্যায় মসজিদে গিয়েছিলাম। ফেরার সময়ে দেখি চারদিকে সহিংসতা শুরু হয়ে গেছে,” বলছিলেন মি. খালেক।

শহরবাসী এক নারী কুণ্ডা যাদব বিবিসিকে বলেছেন যে সহিংসতার সময়ে বাড়িতে শুধু নারীরাই ছিলেন। তাদের বাড়িতে পাথর ছোঁড়া হয়েছে, কাঁচের বোতল ছোঁড়া হয়েছে।

“ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম ওই সময়টায়,” জানাচ্ছিলেন মিজ. যাদব। বিবিসি