
বাহা বা ফুল উৎসব আসলে সৃষ্টির উৎসব। বসন্তকালে গাছে গাছে পাতা, মুকুল প্রস্ফুটিত হয়, ফুল ফোটে। শাল, পলাশের ফুলে ভরে ওঠে জঙ্গল। এই ঋতুতে যে ফুল ও পাতা গজায় তাকে ব্যবহারের আগে প্রকৃতির সেই নতুন সৃষ্টিকে সম্মান জানাতেই এই বাহা উৎসব পালিত হয়।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দিনব্যাপী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ নাচে-গানে মেতে উঠে বাহা উৎসব উদযাপনে। বাহা পর্ব উপলক্ষে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাপল্লী সেজেছে বসন্তের রঙিন সাজে। সকালে ‘মারাংবুরু’র কাছে পূজা-অর্চনা শেষে নিজেদের ও দেশের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করেন তারা।
উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের তল্লাপাড়া গ্রামে সেভেন ডে অ্যাডভেন্টিস্ট প্রি সেমিনারি স্কুল প্রাঙ্গণে বেসরকারি সংগঠনের আয়োজনে বাহা পরব বা বসন্ত উৎসব উদযাপন করেন সাঁওতালরা।
দিনভর ধর্মীয় পূজা-অর্চনা ও সাঁওতাল সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাঁওতাল নারী-পুরুষ ও তরুণীরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বাহা পরব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক জেমস সরেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলার নির্বাহী অফিসার সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা, গাইবান্ধা পরিবেশ আন্দোলনের আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান রাফেল, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সভাপতি অমিতাভ দাশ হিমুন, অনুষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, অনলাইন নিউজ পোর্টাল আইপি সাংবাদিক আন্তনী রেমা, আদিবাসী-বাঙারি সংহতি পরিষদ সদর উপজেলার আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, ব্রিটিশ সরেন, মাহবুব মুকুল, সাবিনা টুডু, সুরভী মার্ডি, মনির হোসেন সুইট প্রমুখ।
আলোচকরা বলেন, ‘সাঁওতালরা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য বাংলাদেশের সংস্কৃতিরই অংশ।
সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাদান ও কালচারাল একাডেমি স্থাপন করা প্রয়োজন।’
আলোচকরা আরো বলেন, ‘প্রাণ-প্রকৃতিকে ভালোবেসে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী বাহা উৎসব পালন করে। ভবিষ্যতে যাতে ওই ঐতিহ্যবাহী বাহা পরব হারিয়ে না যায়, সে জন্য প্রতিবছর এই উৎসবের আয়োজন করা উচিত।’
উল্লেখ্য, আদিবাসী সাঁওতালদের অন্যতম একটি প্রধান পার্বণ হচ্ছে ‘বাহা উৎসব’ বা বাহা পরব। বাহা অর্থ ফুল।
তাই বাংলায় বাহা পরবকে ‘ফুল উৎসব’ বলা হয়। মূলত নববর্ষ হিসেবে ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করে সমতলে বসবাসকারী ‘আদিবাসী’ সাঁওতালরা। উত্তরাঞ্চলে সমতলে বসবাসকারী ‘আদিবাসী’ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ওঁড়াও, মুন্ডা, মালো, মাহাতো, মালপাহাড়ী, রাজওয়ারসীসহ মোট ৩৮টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এই বাহা উৎসব পালন করে থাকে।