০৬:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

কেমন হবে এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন: সম্পাদকীয়

  • আপডেট সময়: ০১:৫৩:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • 38

পহেলা বৈশাখ উদয়াপনের অন্যতম একটি দিক হলো পান্তা-ইলিশ খাওয়া। তবে এই বছরের পহেলা বৈশাখ অন্য এক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে। ইলিশ মাছের দর চড়া। তাই পান্তাভাত কাঁচালংকা ও লবণ দিয়ে খেয়ে নেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যেখানে সিংহভাগ মানুষ কষ্টে জীবন যাপন করে, তাদের পক্ষে ইলিশ তো দূরের কথা, একমুঠো আহার জোগাড় করতে তাদেরকে প্রাণান্ত পরিশ্রম করতে হয়।

আমরা এক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দেশকে রক্ষা করেছি। এখন নতুন করে দেশ গড়ার পালা। এই উদ্দেশ্যেই আমরা পালন করবো পহেলা বৈশাখ।

বাংলা নববর্ষের উৎসব “পহেলা বৈশাখ” নামে পরিচিত, যা বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। এটি বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন এবং এ দিনটি সাধারণত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে পড়ে থাকে। এই ছুটির দিন নবজাগরণ, পুনর্জন্ম এবং আনন্দপুর্ন, অনেকটা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের নতুন বছর উদযাপনের মতোই।

এই ছুটির দিনটি সারা বাংলাদেশ জুড়ে আনন্দ ও উৎসবে উদযাপন করা হয়। হরেক রকম কোলাহলপুর্ণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যার মধ্যে অনেকগুলো প্রাচীন যুগে অনুষ্ঠিত মৌসুমি ও কৃষি উৎসবের অনুরূপ। নতুন বছর দিবস উপলক্ষে সারা দেশে অনুষ্ঠিত অসংখ্য মেলায় স্থানীয় কৃষি পণ্য ও কারুশিল্প বিক্রি হয়। ঐতিহ্যবাহী চরক মেলায় অসামান্য আধ্যাত্মিক চমকপ্রদ শারীরিক কসরত দেখানো হয়।

এই দিনের আগের দিন, ব্যবসায়ীরা তাদের হিসাবের বই বন্ধ করে দেন এবং বাঙালি নববর্ষের দিনে নতুন করে হিসাব রাখা শুরু করেন। তারা বিশ্বাস করেন যে এর মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক পুনরারম্ভ এবং শক্তিশালী হবে।

এই ছুটির দিনে পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য। সকল মানুষ সকালে গোসল করে এবং তাদের সেরা কাপড়চোপড় পরিধান করে। এরপর, তারা তাদের বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে দেখা করে, এবং সবাই মিলে একসাথে নানা উৎসবে যোগ দেয়।

অনেক মানুষ মিষ্টান্ন আদানপ্রদান করে এবং কম বয়সীরা আসন্ন বছরের জন্য দোয়ার আশায় বড়দের সালাম করে। এই দিনে তারা এবং গ্রহকে সম্মান করে মণিখচিত আংটি পরার রীতি রয়েছে। হস্তনির্মিত উপহার এবং অভিবাদন কার্ড বিনিময় করা হয় যা সাধারণত স্থানীয় ঐতিহ্য ভিত্তিক।

বছরের শেষ দিনে, বাঙালি পঞ্জিকা ক্রয় করে, যার নাম বাংলা বর্ষপঞ্জি, যা পরবর্তী বছরজুড়ে বিভিন্ন উৎসব, অনুকূল দিনের গাইড।

এবছর পহেলা বৈশাখ একটু অন্যরকমই হবে। র‌্যাবের ডিজি ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। শব্দদূষণ হয় এমন কিছু করা যাবে না। মুখোশ পরা যাবে না। এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।

তাছাড়া, রাজনৈতিক অনৈক্য, মানুষৈ-মানুষে বিভেদ ও দ্বেষ-হিংসা, প্রতিহিংসার নজির দেখছি আমরা। এসব থেকে বেরিয়ে এসে দেশ গড়ার শপথ নিতে হবে আমাদেরকে। অন্য দেশের ষড়যন্ত্র ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য আমাদের দেশের মানুষকে দ্বিধাবিভক্ত করার চেষ্টা করছে।

এইসব অপচেষ্টা রুখে দেয়াই হোক আমাদের পহেলা বৈশাখের শপথ।

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

কেমন হবে এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন: সম্পাদকীয়

আপডেট সময়: ০১:৫৩:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

পহেলা বৈশাখ উদয়াপনের অন্যতম একটি দিক হলো পান্তা-ইলিশ খাওয়া। তবে এই বছরের পহেলা বৈশাখ অন্য এক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে। ইলিশ মাছের দর চড়া। তাই পান্তাভাত কাঁচালংকা ও লবণ দিয়ে খেয়ে নেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যেখানে সিংহভাগ মানুষ কষ্টে জীবন যাপন করে, তাদের পক্ষে ইলিশ তো দূরের কথা, একমুঠো আহার জোগাড় করতে তাদেরকে প্রাণান্ত পরিশ্রম করতে হয়।

আমরা এক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দেশকে রক্ষা করেছি। এখন নতুন করে দেশ গড়ার পালা। এই উদ্দেশ্যেই আমরা পালন করবো পহেলা বৈশাখ।

বাংলা নববর্ষের উৎসব “পহেলা বৈশাখ” নামে পরিচিত, যা বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। এটি বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন এবং এ দিনটি সাধারণত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে পড়ে থাকে। এই ছুটির দিন নবজাগরণ, পুনর্জন্ম এবং আনন্দপুর্ন, অনেকটা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের নতুন বছর উদযাপনের মতোই।

এই ছুটির দিনটি সারা বাংলাদেশ জুড়ে আনন্দ ও উৎসবে উদযাপন করা হয়। হরেক রকম কোলাহলপুর্ণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যার মধ্যে অনেকগুলো প্রাচীন যুগে অনুষ্ঠিত মৌসুমি ও কৃষি উৎসবের অনুরূপ। নতুন বছর দিবস উপলক্ষে সারা দেশে অনুষ্ঠিত অসংখ্য মেলায় স্থানীয় কৃষি পণ্য ও কারুশিল্প বিক্রি হয়। ঐতিহ্যবাহী চরক মেলায় অসামান্য আধ্যাত্মিক চমকপ্রদ শারীরিক কসরত দেখানো হয়।

এই দিনের আগের দিন, ব্যবসায়ীরা তাদের হিসাবের বই বন্ধ করে দেন এবং বাঙালি নববর্ষের দিনে নতুন করে হিসাব রাখা শুরু করেন। তারা বিশ্বাস করেন যে এর মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক পুনরারম্ভ এবং শক্তিশালী হবে।

এই ছুটির দিনে পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য। সকল মানুষ সকালে গোসল করে এবং তাদের সেরা কাপড়চোপড় পরিধান করে। এরপর, তারা তাদের বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে দেখা করে, এবং সবাই মিলে একসাথে নানা উৎসবে যোগ দেয়।

অনেক মানুষ মিষ্টান্ন আদানপ্রদান করে এবং কম বয়সীরা আসন্ন বছরের জন্য দোয়ার আশায় বড়দের সালাম করে। এই দিনে তারা এবং গ্রহকে সম্মান করে মণিখচিত আংটি পরার রীতি রয়েছে। হস্তনির্মিত উপহার এবং অভিবাদন কার্ড বিনিময় করা হয় যা সাধারণত স্থানীয় ঐতিহ্য ভিত্তিক।

বছরের শেষ দিনে, বাঙালি পঞ্জিকা ক্রয় করে, যার নাম বাংলা বর্ষপঞ্জি, যা পরবর্তী বছরজুড়ে বিভিন্ন উৎসব, অনুকূল দিনের গাইড।

এবছর পহেলা বৈশাখ একটু অন্যরকমই হবে। র‌্যাবের ডিজি ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। শব্দদূষণ হয় এমন কিছু করা যাবে না। মুখোশ পরা যাবে না। এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।

তাছাড়া, রাজনৈতিক অনৈক্য, মানুষৈ-মানুষে বিভেদ ও দ্বেষ-হিংসা, প্রতিহিংসার নজির দেখছি আমরা। এসব থেকে বেরিয়ে এসে দেশ গড়ার শপথ নিতে হবে আমাদেরকে। অন্য দেশের ষড়যন্ত্র ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য আমাদের দেশের মানুষকে দ্বিধাবিভক্ত করার চেষ্টা করছে।

এইসব অপচেষ্টা রুখে দেয়াই হোক আমাদের পহেলা বৈশাখের শপথ।