০৩:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

মমতাজের রিমান্ড শুনানি ঘিরে আদালতে হট্টগোল, হাস্যরস

  • আপডেট সময়: ০৮:৫৫:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • 18

মমতাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ছবি: সংগৃহীত


আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সংগীত শিল্পী মমতাজ বেগমকে গতকাল রাতে গ্রেফতারের পর আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) আদালতে তুলে তার সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। রিমান্ড শুনানি চলাকালে এবং পরে বেশ হট্টগোল হয়। রিমান্ড শুনানিতে বিভিন্ন বক্তব্যে উপস্থিত আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়। এমনকি এক পর্যায়ে বিষণ্ন মমতাজ বেগম নিজেও হেসে দেন। শুনানি শেষে আদালত মমতাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তাকে ঘিরে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং কটূক্তিও করেন।

মমতাজ বেগম একজন সংগীত শিল্পী হিসেবেই পরিচিত দেশজুড়ে। তবে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে আগে থেকেই সম্পৃক্ত। তিনি ২০০৮ সালে প্রথমে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য মনোনীত হন। পরের দুই বারের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসনে সরাসরি ভোটে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেলেও তিনি পরাজিত হন। মমতাজ বেগম জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন স্থানে নানা সময়ে দেওয়া বক্তব্যের কারণে বিভিন্ন সময় আলোচিত ও সমালোচিত হন।

মঙ্গলবার দুপুরে সিএমএম আদালতের বিচারক মো. জুয়েল রানার আদালতে মমতাজ বেগমকে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের সমর্থনে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বক্তব্য দেন। শুনানির শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমরা জাতি হিসেবে আবেগপ্রবণ। একজন ফুটবলার ভালো খেললে আমরা তার খেলাটাই দেখি। তাকে পছন্দ করার কারণ তিনি ভালো খেলেন। তেমনিভাবে নায়িকার অভিনয়, শিল্পীর ভালো গান আমরা পছন্দ করি। তারা কোন দল করে সেটা দেখা হয় না। তাদের কাজটাকে আমরা ভালোবাসি। তবে এই আসামি জনগণের ভালোবাসাটাকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন।’

পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, ‘আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব যখন আরেক রাষ্ট্রের কাছে জিম্মি ছিল, গুম, আয়নাঘর, আন্দোলন করলেই যখন গুলি করা হতো, তখন এই মমতাজ গানের ভালোবাসা দিয়ে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করতে গেল।’

সংসদে তার ভূমিকা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘সংসদের অধিবেশনে যেখানে মিনিটে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, সেখানে সে গান গাইলো- আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, সারা বিশ্বে নাই তার তুলনা। সংসদে তোফায়েল, আমুসহ আওয়ামী লীগের অন্য সিনিয়র নেতারা যেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে কটুকথা বলেননি, সেখানে সে বক্তব্য রাখলো খালেদার বাপের নাম কী?’

এসময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা ‘শেইম শেইম’ বলে স্লোগান দেন। এতে কিছুটা হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।


আরো পড়ুন

কোথায় লুকিয়ে ছিলেন গায়িকা ও সংসদ সদস্য মমতাজ? 


শুনানির একপর্যায়ে পিপি আদালতকে বলেন, ‘এই আন্দোলনের সময় যখন হাসিনার মন খারাপ থাকতো তখন সে গণভবনে গিয়ে হাসিনাকে গান শোনাতো।’ এসময় এজলাসে হাস্যরসের তৈরি হয়।

কাঠগড়ায় পুরো সময় বিষণ্ন থাকলেও পিপির এই বক্তব্য শুনে মমতাজ নিজেও হাসতে থাকেন।

এরপর আদালত আসামিপক্ষের বক্তব্য শুনতে চান। সামনে দেখতে না পেয়ে আসামিপক্ষের দাখিল করা নথি থেকে আইনজীবী রেজাউল করিমকে ডাকতে থাকেন দায়িত্বরত সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা। তখন ওই আইনজীবী সামনে আসেন।

বিচারক মমতাজকে জিজ্ঞাসা করেন- আপনি কি উনাকে চিনেন? আপনার আইনজীবী হিসেবে তাকে নিয়োগ করতে চান? তাহলে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। পরে মমতাজ সম্মতি দিয়ে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। তবে ওই আইনজীবী আদালতকে জানান, আজকে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এরপর আদালত বেলা ৩টা ২৮ মিনিটে মমতাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

তিনবারের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। ছবি: সংগৃহীত

এরপর মমতাজকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তখন আইনজীবীরা বলেন, ‘তাকে লিফটে নেওয়া যাবে না। সিঁড়ি দিয়ে নামাতে হবে। বিএনপির অনেক নেতাকে লিফটে নিতে দেওয়া হয়নি। হেঁটে-হেঁটে তোলা হয়েছে। তাকে সাত তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে।’ পরে এজলাসের গেটের সামনে অবস্থান নেন আইনজীবী। তারা এ সময় বেশ উচ্চবাচ্য করেন। তখনেও আদালতে বিচারকাজ চলছিল।

পরে আদালত আইনজীবীদের এজলাস ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীও আইনজীবীদের এজলাস ত্যাগ করতে বলেন। তখন আইনজীবীরা গেটের সামনে অবস্থান নেন। প্রায় ২১ মিনিট এজলাসে রাখা হয় মমতাজকে। পরে নিরাপত্তা বাড়িয়ে তাকে লিফটে তুলে নিচে নামানো হয়। কিন্তু নিচে গিয়েও অবস্থান নেন আইনজীবীরা। পরে নিচ থেকে অতি দ্রুত মমতাজকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেসময় আইনজীবীরা মমতাজকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে পুলিশ সদস্যরা মমতাজ বেগমকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কিতে ও হুড়োহুড়িতে পড়েন। এসময় মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুভ জ্যাকেট পরিয়ে হাজতখানায় নেওয়া হয়। মমতাজ পুরোটা সময় জুড়ে মাথা নিচে করে হাঁটছিলেন। তবে একপ্রকার দৌড়ে নিয়ে যাবার সময় নিজের পায়ের জুতা খুলে যায় মমতাজের।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন মো. সাগর। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আসামিরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেন। এ সময় ভুক্তভোগী সাগরের বুকে গুলি লেগে পেছন দিকে বেরিয়ে যায়। এরপর ছেলেকে তার মা বিউটি আক্তার খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে ওইদিন রাত ৩টায় মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছেলের মরদেহের সন্ধান পান তিনি। পরে সন্তানের মরদেহ গ্রহণ করে গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন করেন।

এ ঘটনায় গত বছর ২৭ নভেম্বর নিহতের মা বিউটি আক্তার বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। এতে শেখ হাসিনাসহ ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া মামলায় ২৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এ মামলার মমতাজ বেগম ৪৯নং এজাহারনামীয় আসামি।

 

 

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

মমতাজের রিমান্ড শুনানি ঘিরে আদালতে হট্টগোল, হাস্যরস

আপডেট সময়: ০৮:৫৫:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

মমতাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ছবি: সংগৃহীত


আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সংগীত শিল্পী মমতাজ বেগমকে গতকাল রাতে গ্রেফতারের পর আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) আদালতে তুলে তার সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। রিমান্ড শুনানি চলাকালে এবং পরে বেশ হট্টগোল হয়। রিমান্ড শুনানিতে বিভিন্ন বক্তব্যে উপস্থিত আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়। এমনকি এক পর্যায়ে বিষণ্ন মমতাজ বেগম নিজেও হেসে দেন। শুনানি শেষে আদালত মমতাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তাকে ঘিরে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং কটূক্তিও করেন।

মমতাজ বেগম একজন সংগীত শিল্পী হিসেবেই পরিচিত দেশজুড়ে। তবে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে আগে থেকেই সম্পৃক্ত। তিনি ২০০৮ সালে প্রথমে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য মনোনীত হন। পরের দুই বারের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসনে সরাসরি ভোটে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেলেও তিনি পরাজিত হন। মমতাজ বেগম জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন স্থানে নানা সময়ে দেওয়া বক্তব্যের কারণে বিভিন্ন সময় আলোচিত ও সমালোচিত হন।

মঙ্গলবার দুপুরে সিএমএম আদালতের বিচারক মো. জুয়েল রানার আদালতে মমতাজ বেগমকে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের সমর্থনে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বক্তব্য দেন। শুনানির শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমরা জাতি হিসেবে আবেগপ্রবণ। একজন ফুটবলার ভালো খেললে আমরা তার খেলাটাই দেখি। তাকে পছন্দ করার কারণ তিনি ভালো খেলেন। তেমনিভাবে নায়িকার অভিনয়, শিল্পীর ভালো গান আমরা পছন্দ করি। তারা কোন দল করে সেটা দেখা হয় না। তাদের কাজটাকে আমরা ভালোবাসি। তবে এই আসামি জনগণের ভালোবাসাটাকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন।’

পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, ‘আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব যখন আরেক রাষ্ট্রের কাছে জিম্মি ছিল, গুম, আয়নাঘর, আন্দোলন করলেই যখন গুলি করা হতো, তখন এই মমতাজ গানের ভালোবাসা দিয়ে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করতে গেল।’

সংসদে তার ভূমিকা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘সংসদের অধিবেশনে যেখানে মিনিটে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, সেখানে সে গান গাইলো- আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, সারা বিশ্বে নাই তার তুলনা। সংসদে তোফায়েল, আমুসহ আওয়ামী লীগের অন্য সিনিয়র নেতারা যেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে কটুকথা বলেননি, সেখানে সে বক্তব্য রাখলো খালেদার বাপের নাম কী?’

এসময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা ‘শেইম শেইম’ বলে স্লোগান দেন। এতে কিছুটা হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।


আরো পড়ুন

কোথায় লুকিয়ে ছিলেন গায়িকা ও সংসদ সদস্য মমতাজ? 


শুনানির একপর্যায়ে পিপি আদালতকে বলেন, ‘এই আন্দোলনের সময় যখন হাসিনার মন খারাপ থাকতো তখন সে গণভবনে গিয়ে হাসিনাকে গান শোনাতো।’ এসময় এজলাসে হাস্যরসের তৈরি হয়।

কাঠগড়ায় পুরো সময় বিষণ্ন থাকলেও পিপির এই বক্তব্য শুনে মমতাজ নিজেও হাসতে থাকেন।

এরপর আদালত আসামিপক্ষের বক্তব্য শুনতে চান। সামনে দেখতে না পেয়ে আসামিপক্ষের দাখিল করা নথি থেকে আইনজীবী রেজাউল করিমকে ডাকতে থাকেন দায়িত্বরত সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা। তখন ওই আইনজীবী সামনে আসেন।

বিচারক মমতাজকে জিজ্ঞাসা করেন- আপনি কি উনাকে চিনেন? আপনার আইনজীবী হিসেবে তাকে নিয়োগ করতে চান? তাহলে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। পরে মমতাজ সম্মতি দিয়ে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। তবে ওই আইনজীবী আদালতকে জানান, আজকে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এরপর আদালত বেলা ৩টা ২৮ মিনিটে মমতাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

তিনবারের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। ছবি: সংগৃহীত

এরপর মমতাজকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তখন আইনজীবীরা বলেন, ‘তাকে লিফটে নেওয়া যাবে না। সিঁড়ি দিয়ে নামাতে হবে। বিএনপির অনেক নেতাকে লিফটে নিতে দেওয়া হয়নি। হেঁটে-হেঁটে তোলা হয়েছে। তাকে সাত তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে।’ পরে এজলাসের গেটের সামনে অবস্থান নেন আইনজীবী। তারা এ সময় বেশ উচ্চবাচ্য করেন। তখনেও আদালতে বিচারকাজ চলছিল।

পরে আদালত আইনজীবীদের এজলাস ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীও আইনজীবীদের এজলাস ত্যাগ করতে বলেন। তখন আইনজীবীরা গেটের সামনে অবস্থান নেন। প্রায় ২১ মিনিট এজলাসে রাখা হয় মমতাজকে। পরে নিরাপত্তা বাড়িয়ে তাকে লিফটে তুলে নিচে নামানো হয়। কিন্তু নিচে গিয়েও অবস্থান নেন আইনজীবীরা। পরে নিচ থেকে অতি দ্রুত মমতাজকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেসময় আইনজীবীরা মমতাজকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে পুলিশ সদস্যরা মমতাজ বেগমকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কিতে ও হুড়োহুড়িতে পড়েন। এসময় মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুভ জ্যাকেট পরিয়ে হাজতখানায় নেওয়া হয়। মমতাজ পুরোটা সময় জুড়ে মাথা নিচে করে হাঁটছিলেন। তবে একপ্রকার দৌড়ে নিয়ে যাবার সময় নিজের পায়ের জুতা খুলে যায় মমতাজের।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন মো. সাগর। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আসামিরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেন। এ সময় ভুক্তভোগী সাগরের বুকে গুলি লেগে পেছন দিকে বেরিয়ে যায়। এরপর ছেলেকে তার মা বিউটি আক্তার খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে ওইদিন রাত ৩টায় মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছেলের মরদেহের সন্ধান পান তিনি। পরে সন্তানের মরদেহ গ্রহণ করে গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন করেন।

এ ঘটনায় গত বছর ২৭ নভেম্বর নিহতের মা বিউটি আক্তার বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। এতে শেখ হাসিনাসহ ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া মামলায় ২৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এ মামলার মমতাজ বেগম ৪৯নং এজাহারনামীয় আসামি।