
১৫ জুন ইসরায়েলি হামলায় তেহরানের একটি তেল শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর প্রচণ্ড ধোঁয়া উড়ছে। ছবি: এএফপি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি তেহরানে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তার দেশের ওপর ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ও সমর্থন ছাড়া সম্ভব হতো না। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রামাণ্য ও দৃঢ় তথ্য-প্রমাণ রয়েছে—এই অঞ্চলে থাকা মার্কিন বাহিনী ও তাদের ঘাঁটিগুলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে সামরিক হামলার ক্ষেত্রে সরাসরি সহায়তা দিয়েছে।’
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, তিনি এসব হামলার কথা জানতেন, এগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও আরো হামলার পরিকল্পনা রয়েছে।
আরাঘচির ভাষায়, ‘এই কারণে আমাদের দৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলার অংশীদার ও এর দায় তাদের স্বীকার করতেই হবে।’
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ওয়াশিংটন বিভিন্ন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে তেহরানকে জানিয়েছে, ইরানের নাতাঞ্জের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়। তবে আরাঘচি বলেন, ‘আমরা এই দাবি বিশ্বাস করি না, কারণ এর বিপরীতে আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে, স্পষ্টভাবে তাদের অবস্থান জানানো এবং পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার নিন্দা জানানো। এটি আন্তর্জাতিক আইনে দণ্ডনীয় কাজ এবং আমরা আশা করি, পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে নিজেদের সদিচ্ছা প্রমাণ করতে যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার নিন্দা করবে এবং এ সংঘাত থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবে।’
আরাঘচি আরো বলেন, এই হামলাগুলো এমন এক সময় করা হয়েছে, যখন ওমানের মধ্যস্থতায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনার ষষ্ঠ দফা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ইসরায়েল অতীতেও যেমন করেছে, এবারও কূটনৈতিক আলোচনা ব্যাহত করতে যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত।’
আরো পড়ুন
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো কোথায়, কোনগুলোতে হামলা হয়েছে
https://www.kalerkantho.com/online/world/2025/06/15/1532116
‘কৌশলগত বড় ভুল’ বলছে ইরান
ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের হামলায় তেহরানসহ দেশের বিভিন্ন শহরের সামরিক ও আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এতে অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে বেসামরিক লোকজনও রয়েছে।
এ ছাড়া ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ও ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) একাধিক উচ্চপদস্থ কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
এর জবাবে ইরান দুই রাত ধরে ইসরায়েলের তেলআবিব ও হাইফায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে। এতে অন্তত ১০ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছে।
আরাঘচি জানান, শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোররাতে ইসরায়েল ইরানের তেল শোধনাগার, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জ্বালানি গুদামে হামলা চালানোর পর ইরানও ইসরায়েলের জ্বালানিবিষয়ক অবকাঠামোতে পাল্টাহামলা শুরু করে। রবিবার ভোরে যখন তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ ও আকাশ প্রতিরক্ষার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল, তখন ইসরায়েল পশ্চিম তেহরানের শাহরান এলাকায় একটি জ্বালানির গুদামে হামলা চালায়।
এতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। কর্তৃপক্ষ জানায়, আগুন কয়েক ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে এবং বেশির ভাগ জ্বালানি হামলার আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী শনিবার দক্ষিণ ইরানের বুসেহর প্রদেশের আসালুয়েহ এলাকায় বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্সের’ ১৪ নম্বর পর্যায়ে হামলা চালায়। আরাঘচি বলেন, ‘এই হামলা ছিল একটি বড় কৌশলগত ভুল, যার উদ্দেশ্যই ছিল অঞ্চলকে একটি বড় যুদ্ধে টেনে আনা। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও জটিল, এখানে সামান্য সামরিক উত্তেজনাও পুরো অঞ্চল, এমনকি গোটা বিশ্বকে প্রভাবিত করতে পারে।’
ইরান ও ইসরায়েল—দুই দেশই জানিয়েছে, তাদের পাল্টা হামলা অব্যাহত থাকবে। এরই মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রবিবার ইরানিদের সতর্ক করে বলেছে, ‘যারা সামরিক অস্ত্র তৈরির কারখানা ও তাদের সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশে থাকবে, তারা মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকবে।’
তবে আরাঘচি বলেন, যদি ইসরায়েল হামলা বন্ধ করে, তাহলে ইরানও হামলা বন্ধে প্রস্তুত। একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে এসে ইসরায়েলের নিন্দা করার আহ্বান জানান।