০৬:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

ভারতীয় গণমাধ্যমের চোখে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত

  • আপডেট সময়: ০১:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
  • 5

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও সংঘাতকে ঘিরে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো ভিন্ন আঙ্গিকে সংবাদ প্রচার করছে, যা নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে, অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে মনোযোগ দিচ্ছে, অন্যদিকে ভারতের মূলধারার গণমাধ্যমগুলো ইসরায়েলপন্থী অবস্থানকে প্রকাশ্য সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিচে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর কিছু নির্বাচিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সেই চিত্র তুলে ধরা হলো—

‘ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: নেতানিয়াহুর জন্য একটি লাইফলাইন?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই সংঘাতকে নেতানিয়াহুর জন্য রাজনৈতিকভাবে ‘নতুন জীবনরেখা’ হিসেবে তুলে ধরেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। প্রতিবেদনে যুদ্ধের মানবিক দিক বা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উপেক্ষা করে নেতানিয়াহুর স্বার্থে সংঘাতকে সহায়ক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার আরেকটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন’ এর যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলবিরোধী অংশ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয় ভারত। আর এটি একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা, যা ইসরায়েলের প্রতি ভারতের সমর্থনকেই ইঙ্গিত করে।


আরো পড়ুন

হাসপাতালে নয়, ইসরায়েলি সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে ইরান


‘পাকিস্তান ও ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা ভারত ও ইসরায়েলকে আরও কাছে এনেছে’ শীর্ষক ইকোনোমিক টাইমসের বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে ইরানকে পরোক্ষ হুমকি হিসেবে তুলে ধরে বলা হয়েছে, ভারতের নিরাপত্তা চিন্তা থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়েছে। প্রতিবেদনে ইরানকে একধরনের ‘হুমকি’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা সংঘাতের পক্ষে উস্কানি হিসেবেই দেখা যেতে পারে।

ইসরায়েলে অবস্থান করা ভারতীয় নাগরিকদের ইসরায়েলের নিরাপত্তা নির্দেশনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। এই প্রতিবেদনে ইসরায়েলে অবস্থানরত ভারতীয়দের নিরাপত্তা এবং সর্তকতা সংক্রান্ত নির্দেশনার উপরই ফোকাস করা হয়েছে, কিন্তু ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপট বা বৈশ্বিক উদ্বেগগুলোকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে।

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের কারণে তেলের মূল্য বাড়ছে, এমন একটি প্রকাশিত প্রতিবেদন এনডিটিভি এমনভাবে প্রকাশ করেছে যেন এজন্য ইরান দায়ী। বলা হয়েছে, সংঘাতের ফলে তেলের মূল্য বাড়ছে, যা ভারতীয় অর্থনীতির জন্য হুমকি। এটি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন ইরানই সংঘাত শুরু করেছে এবং ভারতের ভোগান্তির জন্য দায়ী।


আরো পড়ুন

মধ্যপ্রাচ্য জ্বলছে: ভারত কেন ইসরায়েলের পক্ষে?


ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি প্রচারিত একটি ভিডিওটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে সেটির বরাতে জানায়, ‘ইরানের অভিজাত বাহিনীর জেনারেল মোহসেন রেজায়ি দাবি করেছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে, তবে পাকিস্তান ইসরায়েলের ওপর পারমাণবিক হামলা চালাবে।’

রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সিনিয়র অফিসার এবং ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রেজায়ি বলেন, ‘পাকিস্তান আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, যদি ইসরায়েল আমাদের বিরুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে, তাহলে তারা (পাকিস্তান) ইসরায়েলের ওপর পারমাণবিক হামলা চালাবে।’

রেজায়ি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান ইরানের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে এবং মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৪ সালের শুরুতে ইরান-পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময়ের পর দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে।’

তেহরানের কিছু গোপন সক্ষমতা রয়েছে, যা এখনও বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ পায়নি বলেও দাবি করেন তিনি। তবে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এই দাবি অস্বীকার করেছেন বলে জানায় এনডিটিভি।

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

ভারতীয় গণমাধ্যমের চোখে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত

আপডেট সময়: ০১:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও সংঘাতকে ঘিরে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো ভিন্ন আঙ্গিকে সংবাদ প্রচার করছে, যা নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে, অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে মনোযোগ দিচ্ছে, অন্যদিকে ভারতের মূলধারার গণমাধ্যমগুলো ইসরায়েলপন্থী অবস্থানকে প্রকাশ্য সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিচে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর কিছু নির্বাচিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সেই চিত্র তুলে ধরা হলো—

‘ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: নেতানিয়াহুর জন্য একটি লাইফলাইন?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই সংঘাতকে নেতানিয়াহুর জন্য রাজনৈতিকভাবে ‘নতুন জীবনরেখা’ হিসেবে তুলে ধরেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। প্রতিবেদনে যুদ্ধের মানবিক দিক বা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উপেক্ষা করে নেতানিয়াহুর স্বার্থে সংঘাতকে সহায়ক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার আরেকটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন’ এর যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলবিরোধী অংশ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয় ভারত। আর এটি একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা, যা ইসরায়েলের প্রতি ভারতের সমর্থনকেই ইঙ্গিত করে।


আরো পড়ুন

হাসপাতালে নয়, ইসরায়েলি সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে ইরান


‘পাকিস্তান ও ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা ভারত ও ইসরায়েলকে আরও কাছে এনেছে’ শীর্ষক ইকোনোমিক টাইমসের বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে ইরানকে পরোক্ষ হুমকি হিসেবে তুলে ধরে বলা হয়েছে, ভারতের নিরাপত্তা চিন্তা থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়েছে। প্রতিবেদনে ইরানকে একধরনের ‘হুমকি’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা সংঘাতের পক্ষে উস্কানি হিসেবেই দেখা যেতে পারে।

ইসরায়েলে অবস্থান করা ভারতীয় নাগরিকদের ইসরায়েলের নিরাপত্তা নির্দেশনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। এই প্রতিবেদনে ইসরায়েলে অবস্থানরত ভারতীয়দের নিরাপত্তা এবং সর্তকতা সংক্রান্ত নির্দেশনার উপরই ফোকাস করা হয়েছে, কিন্তু ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপট বা বৈশ্বিক উদ্বেগগুলোকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে।

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের কারণে তেলের মূল্য বাড়ছে, এমন একটি প্রকাশিত প্রতিবেদন এনডিটিভি এমনভাবে প্রকাশ করেছে যেন এজন্য ইরান দায়ী। বলা হয়েছে, সংঘাতের ফলে তেলের মূল্য বাড়ছে, যা ভারতীয় অর্থনীতির জন্য হুমকি। এটি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন ইরানই সংঘাত শুরু করেছে এবং ভারতের ভোগান্তির জন্য দায়ী।


আরো পড়ুন

মধ্যপ্রাচ্য জ্বলছে: ভারত কেন ইসরায়েলের পক্ষে?


ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি প্রচারিত একটি ভিডিওটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে সেটির বরাতে জানায়, ‘ইরানের অভিজাত বাহিনীর জেনারেল মোহসেন রেজায়ি দাবি করেছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে, তবে পাকিস্তান ইসরায়েলের ওপর পারমাণবিক হামলা চালাবে।’

রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সিনিয়র অফিসার এবং ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রেজায়ি বলেন, ‘পাকিস্তান আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, যদি ইসরায়েল আমাদের বিরুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে, তাহলে তারা (পাকিস্তান) ইসরায়েলের ওপর পারমাণবিক হামলা চালাবে।’

রেজায়ি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান ইরানের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে এবং মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৪ সালের শুরুতে ইরান-পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময়ের পর দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে।’

তেহরানের কিছু গোপন সক্ষমতা রয়েছে, যা এখনও বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ পায়নি বলেও দাবি করেন তিনি। তবে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এই দাবি অস্বীকার করেছেন বলে জানায় এনডিটিভি।