
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ইকবাল বাহার। ছবি: সংগৃহীত
মোস্তফা ইমরুল কায়েস
শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসনকালে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচিত ছিলেন তাদের একজন ইকবাল বাহার। অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে অবসরে যাওয়া এই কর্মকর্তাকে শুক্রবার (২০ জুন) গত জুলাই আন্দোলনের একটি হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এই কর্মকর্তা পুলিশে ‘জুয়াড়ি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এমনকি তাকে যখন অফিসার্স ক্লাব থেকে গ্রেফতার করা হয় তখনও তিনি জুয়া খেলছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ইকবাল বাহার সবার কাছে ‘জুয়াড়ি ইকবাল বাহার’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। কারণ তিনি ডিউটির বাইরে বাকি সময়টা জুয়ার আড্ডায় মত্ত থাকতেন বলে জানিয়েছেন সহকর্মীরা। পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্যকে জুয়ায় আসক্ত করার পেছনে তাকে দায়ী করা হয়।
তাকে শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাব থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি তখন ক্লাবে জুয়া খেলছিলেন। তবে জুয়ার আসর থেকে গ্রেফতারের বিষয়টি লজ্জাজনক, এজন্য কেউ সেটা বলছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবি সদস্য
জুয়া ছাড়াও তিনি নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠভাজন এই কর্মকর্তা বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদের দমনেও ছিলেন অগ্রগামী।
ইকবাল বাহারকে শুক্রবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় শাহিনুর বেগম নামে এক হকারকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার (২১ জুন) আদালতে তোলা হয়। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ছাত্রলীগ নেতা থেকে জুয়াড়ি পুলিশ
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইকবাল বাহারের গ্রামের বাড়ি পাবনার সাথিয়ায়। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জিএস পদে নির্বাচনও করেন। ক্যাম্পাসে মারামারি ও চাঁদাবাজিতে তার সম্পৃক্ততা ছিল।
১৯৮৯ সালে ইকবাল বাহার এএসপি হিসেবে পুলিশে যোগ দেন। ২০১৬ সালে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার করা হয়। এর আগে তিনি রাজশাহী পুলিশের ডিআইজিসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ইকবাল বাহার ঢাকা ও যশোরের পুলিশ সুপারও ছিলেন। ২০২২ সালে তিনি অবসরে যান।
দাপুটে পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন ইকবাল বাহার। ছবি: সংগৃহীত
শুক্রবার বিকেলে তাকে রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাব থেকে গ্রেফতার করা হয়। তখনও তিনি জুয়ায় মত্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র।
ডিবির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, তাকে শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাব থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি তখন ক্লাবে জুয়া খেলছিলেন। তবে জুয়ার আসর থেকে গ্রেফতারের বিষয়টি লজ্জাজনক, এজন্য কেউ সেটা বলছেন না।
ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্য
আওয়ামী লীগ আমলে দাপুটে পুলিশ কর্মকর্তা ইকবাল বাহার নানা অপকর্মে জড়িয়ে যান। তিনি ঢাকা জেলার এসপির দায়িত্ব পালনের আগে যশোর জেলায় এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পদোন্নতি পেয়ে রাজশাহীর ডিআইজি, পরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ-সিএমপির কমিশনার হন। সবখানেই তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।
ইকবাল বাহার ঢাকার এসপি থাকাকালীন ২০১১-১৩ সালের দিকে এই জেলায় ভুয়া ঠিকানায় এক হাজার লোক পুলিশে চাকরি পায়। অভিযোগ রয়েছে, এর নেপথ্যে ছিলেন ইকবাল বাহার। এই নিয়োগে প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি তিন থেকে চার লাখ টাকা করে নেন। স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে প্রায় অর্ধ শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ছবি: সংগৃহীত
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, তৎকালীন ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা সাজিয়ে এক হাজার লোককে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই নিয়োগটি হয়েছিল ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে। পুলিশে নিয়োগ পাওয়া সবার বাড়ি ছিল গোপালগঞ্জে। তাদের ঢাকার ধামরাইয়ে এনে জমি কেনানো হতো। প্রতিদিন ধামরাইয়ের গ্রামগুলোতে নতুন মুখ দেখা যেতো। কিন্তু পরে সেই লোকদের গ্রামবাসী আর খুঁজে পায়নি।
আরো পড়ুন
ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জের সামনে পুলিশ
ইকবাল বাহার ছিলেন শেখ হাসিনার খুবই বিশ্বস্ত একজন অফিসার। ফলে শেখ হাসিনার প্রেসক্রিপশনে গোপালগঞ্জের লোকদের ঢাকায় এনে জেলা কোটায় ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে পুলিশে চাকরি দিতেন। তার সঙ্গে পরে এই অপকর্মে জড়িত হন আওয়ামী লীগ আমলের সবশেষ ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
দুর্ব্যবহার করতেন সহকর্মীদের সঙ্গে
তার সময়ে চাকরি করেছেন এমন কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, ইকবাল ব