
দুই মাদক কারবারির দ্বন্দ্বে ফের অস্থির জেনেভা ক্যাম্প। ছবি: সংগৃহীত
-মাদকের আধিপত্য ঘিরে সিরিজ ককটেল বিস্ফোরণ
-মুখ খুললেই হামলে পড়ে মাদক কারবারিরা
-মাদক কারবারিদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সখ্য!
-মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান: ওসি মোহাম্মদপুর
রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে শীর্ষ মাদক কারবারিদের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে কয়েক দফায় ভয়াবহ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েক দিন ধরে চলা এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সবশেষ রোববার (১০ আগস্ট) দুপুর থেকে দুই দফায় তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে, এসব ঘটনায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয় না। কারণ পরে যে মুখ খুলবে তার ওপর হামলা হবে।
মাদক নিয়ে জেনেভা ক্যাম্পে চলা সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বশির বাবুর্চি (৪০) ও মদিনা (২০) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন।
জেনেভা ক্যাম্প বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি বুনিয়া সোহেল ও বেজি নাদিম মিলে পিচ্চি রাজার মাদকের স্পট দখলে নিতে এই হামলা চালায়। বেশ কয়েক দিন ধরে পুরো জেনেভা ক্যাম্পের মাদকের আধিপত্য দখল করতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলাসহ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে চক্রটি।
গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে জেনেভা ক্যাম্পের পাকা ক্যাম্প এলাকায় শোহরাব এর পান দোকানের সামনে বিয়ের হলুদ অনুষ্ঠানে বুনিয়া সোহেলের নেতৃত্বে কয়েকজন মাদক কারবারি দেশীয় ধারালো অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে এসে কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বশির বাবুর্চি নামে একজন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনার দুদিন পর রোববার (১০ আগস্ট) দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জেনেভা ক্যাম্পের ৮ নম্বর সেক্টর এলাকায় তিন দফায় তিনটি ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করে বুনিয়া সোহেল ও তার সহযোগীরা। এতে এলাকার অনেক দোকানের ক্ষয়ক্ষতি ও বেশ কয়েলজন আহত হন। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর আহত হন মানসিক ভারসাম্যহীন মদিনা বেগম নামে এক নারী। এছাড়াও, বুনিয়া সোহেল আগে থেকেই ৭ নম্বর সেক্টরের হুমায়ুন রোড এলাকায় হেরোইন বিক্রি করেন। এখানে নতুন করে পিচ্চি রাজা ও মনু মিয়ার নেতৃত্বে ইমতিয়াজ হেরোইন ব্যবসা শুরু করেন। এই হেরোইন ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই দিন এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। এছাড়া তারা বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা বিক্রি করে আসছে। এটা জেনেভা ক্যাম্পের নিত্যদিনের ঘটনা। মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
জেনেভা ক্যাম্পের জিয়াউদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, গত শুক্রবারেও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বুনিয়া সোহেল পিচ্চি রাজারকে উদ্দেশ্য করে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়। বুনিয়া সোহেল মোটরসাইকেলে এসে প্রকাশ্যে ককটেল ফাটিয়ে আবার চলে যায়। আজ দুপুরেও শীর্ষ মাদক কারবারি বুনিয়া সোহেল জন্ডিস গলিতে এসে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়। এতে এক নারী আহত হয়েছে বলে শুনেছি।
তিনি জানান, পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জেনেভা ক্যাম্পে ঢোকার আগেই তারা খবর পেয়ে যায়। তারা বিভিন্ন জায়গায় সোর্স রাখে যাতে করে পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢুকলে তাদের জন্য দ্রুত খবর পৌঁছায়। আমাদের ধারণা, পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এদের সাথে জড়িত রয়েছে। তা না হলে অভিযানের খবর তারা আগে থেকে কীভাবে জেনে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেনেভা ক্যাম্পের কয়েকজন বাসিন্দা ঢাকা মেইলকে জানান, শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী বুনিয়া সোহেলের নামে অন্তত ৩০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর থানায় তিনটি হত্যা মামলা, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মাদকসহ ১৮টি মামলার আসামি এই বুনিয়া সোহেল। বুনিয়া সোহেল জেনেভা ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরের আব্দুস সালামের ছেলে। পিচ্চি রাজার নামে মাদক ও হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গত বছরের ৩১ অক্টোবর সিলেটের কোতোয়ালি এলাকা থেকে র্যাব গ্রেফতার করে। এর কয়েক মাস পরেই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যায় শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী বুনিয়া সোহেল। এরপর জেল থেকে বের হয়েছে আবারো তার লোকজন দিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা শুরু করে। চলতি বছরের ৪ জুন রাতে সেনাবাহিনী ও র্যাব-২ যৌথভাবে একটি ফার্মেসি থেকে বুনিয়া সোহেলের মাদক বিক্রির কোটি টাকার বেশি জব্দ করা হয়। বুনিয়া সোহেল ও বেজি নাদিম প্রকাশ্যে পিচ্চি রাজার দোকানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, বুনিয়া সোহেল দুপুর থেকে পৌনে দুইটার মধ্যে পিচ্চি রাজার একটি দোকানের সামনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং দোকানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। এই ঘটনায় পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মদিনা নামে এক নারী আহত হয়েছে। এর আগের গত শুক্রবার জুমার নামাজের পরে তারা এই মাদকের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে বুনিয়া সোহেল গ্রুপ ও পিচ্চি রাজার গ্রুপ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়।
ওসি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বুনিয়া সোহেল ও পিচ্চি রাজা গ্রুপের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। এই দুই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। আমরা দুপুরে অভিযান পরিচালনা করেছি। পুলিশ যাওয়ার খবরে ক্যাম্প ফাঁকা হয়ে গেছে, কাউকেই পাওয়া যায়নি। মাদক কারবারিদের ধরতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।