
চীনা সীমান্তবর্তী ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখকে রাজ্য মর্যাদার দাবিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র সংঘর্ষে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আরও প্রায় ৯০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো। এছাড়াও সংঘর্ষের সময় একটি পুলিশের গাড়িসহ বেশকয়েকটি গাড়ি আগুন দেওয়া হয়। এছাড়াও ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অফিসেও হামলা চালায় ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা। এসব ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে এটা কি জেন জি-র বিক্ষোভ ছিল?, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপালের পর ভারতও কি জেন জি-র বিক্ষোভ দেখলো?
কী হয়েছে লাদাখে?
অধিকারকর্মী সোনম ওয়াংচুকসহ ১৫ জন গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে চারদফা দাবিতে অনশন করছিলেন। সেই দাবির মধ্যে ছিল, লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে, চাকরিতে সংরক্ষণ চালু করতে হবে, লেহ ও কার্গিলকে নিয়ে একটি লোকসভা আসন করতে হবে।
মঙ্গলবার রাতে দুই অনশনকারীর শরীরের অবস্থা খারাপ হয়, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এরপর লাদাখ অ্যাপেক্স বডি (এলএবি)-এর যুব শাখা আন্দোলনের ডাক দেয়। বুধবার সকাল থেকে লেহ শহর পুরোপুরি বন্ধ ছিল। পরে এনডিএস মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডে বিশাল জমায়েত হয়। তারপর তারা স্লোগান দিতে দিতে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে মিছিল করে যেতে থাকে। বিজেপি সদরদপ্তর ও হিল কাউন্সিলের অফিসে পাথর ছোড়া শুরু হলে পরিস্থিতি খারাপ হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়। জনতা সহিংস হয়ে ওঠে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ ওয়াচুংক উসকানিমূলক বক্তৃতা দিলে জনতা অনশনস্থন থেকে বেরিয়ে রাজনৈতিক দলের অফিস আক্রমণ করে, তারা সরকারি অফিসেও হামলা করে। তারা তিনটি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশের গাড়ি ভাঙে। ৩০ জনের বেশি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্মী আহত হয়েছে। পুলিশ আত্মরক্ষায় গুলি চালায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কয়েকজনের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পরেই অনশনভঙ্গ করেন সোনম ওয়াংচুক। তিনি একটা বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমি সব যুবককে বলছি, তারা যেন অবিলম্বে সহিংসতা থামান। পরিস্থিতি যেন আর খারাপ না হয়। আমরা লাদাখ বা দেশে অস্থিরতা চাই না।’’
তিনি বলেছেন, এটা লাদাখের জন্য ও তার কাছে সবচেয়ে দুঃখের দিন। কারণ, গত পাঁচ বছর ধরে তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছেন। পাঁচবার অনশন করেছেন। লেহ থেকে দিল্লি পর্যন্ত হেঁটেছেন। তারা শান্তির বার্তা নিয়ে গেছেন।
সোনম আরও বলেছেন, ‘আজ দেখছি, শান্তি পিছনের সারিতে চলে গেছে। সহিংসতা ও আগুন লাগানোর ঘটনা সামনে আসছে। এটা বন্ধ হোক। প্রশাসনও যেন কাঁদানে গ্যাস না ছোড়ে। আমরা অবিলম্বে অনশন তুলে নিচ্ছি। আমরা চাই না, আর একজন যুবক প্রাণ হারান। আলোচনাকে শান্তভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা অহিংস পথে আন্দোলন করব। যখন শান্তির বার্তা উপেক্ষিত হয়, তখন এই অবস্থা হয়।’
কী বললো ভারতের কেন্ত্রীয় সরকার?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে, ‘সোনম ওয়াচুংক যে দাবি নিয়ে অনশন করছেন, সেই বিষয়গুলি নিয়ে লেহ ও কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পরবর্তী বৈঠক ৬ অক্টোবর হবে। লাদাখের নেতাদের সঙ্গে তারা ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর বৈঠক করবেন।’
এতে বলা হয়েছে, ‘আলোচনার ফলে সংরক্ষণের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, মেয়েদের জন্য এক তৃতীয়াংশ সংরক্ষণ চালু হয়েছে। ভোটি ও পুরগিতে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। খালি পদে নিয়োগ শুরু হয়েছে। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানুষের তা সহ্য হয়নি। তারা আলোচনার প্রক্রিয়াকে অন্তর্ঘাত করার চেষ্টা করছে’।
এটা কি জেন জি-র আন্দোলন?
বুধবার লেহ-তে আন্দোলন ছিল মূলত যুবদের। এরপরই ভারতের সংবাদমাধ্যমে এই আলোচনা শুরু হয়, এটা কি জেন জি-র আন্দোলন? শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপালের পর ভারতেও কি এইভাবে জেন জি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করলো?
ডিডটাব্লিউর সাংবাদিক স্যমন্তক ঘোষ জানিয়েছেন, ‘এটাকে জেন জি-র আন্দোলন বলা যেতে পারে। অনশনরত দুই জনের শরীর খারাপ হওয়ার পর তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলে জেন জি-র একাংশ ক্ষুব্ধ হন। তারাই মূলত রাস্তায় নামেন। বিকেল চারটের পর থেকে পরিস্থিতি শান্ত হয়। যদিও কারফিউ বহাল রাখা হয়েছে। সিআরপিএফের গুলিচালানো নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে এই আন্দোলনে যে জেন জিই মূলত ছিল তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
ভারতের জাতীয় মিডিয়ার রিপোর্টেও বলা হয়েছে, এটা ছিল যুবদের আন্দোলন।
স্থানীয় বিজেপি নেতারা অবশ্য দাবি করেছেন, এটা জেন জি-র আন্দোলন নয়, এই সহিংস আন্দোলনের পিছনে আসলে কংগ্রেসের মদত আছে। তারাই অস্থিরতা তৈরি করছে।
এদিকে গতকালের সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ ব্যাপক গ্রেফতারি অভিযান শুরু করেছে। বুধবারের সহিংসতায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর। এরপরই রাতভর অভিযান চালিয়ে ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে কংগ্রেস নেতা সেপাগ থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে, এনডিটিভি























