
সাদা এই প্রাইভেটকার থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পাকিংয়ে প্রাইভেটকার থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহ দুটির প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, মরদেহ দুটির বিভিন্ন জায়গায় ফোলা ও ফোসকা পড়া। এছাড়া মুখ লালচে ফোলা ও রক্তমাখা রয়েছে। নিহত দুজন হলেন- জাকির হোসেন ও মিজানুর।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সুরতহাল প্রতিবেদনে রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন। তবে সেখানে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ নেই।
এদিকে এদিন দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে স্বজনরা অভিযোগ করেন, জাকির ও মিজানুরের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। তাদের হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
জানা গেছে, জাকির হোসেন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার লটপটিয়া গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে এবং মিজানুর দক্ষিণ গোমাতলী গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে।
মর্গে নিহত মিজানুরের ভাগিনা মো. রিয়াদ বলেন, আমার মামা আগে গ্রামে বালুর ব্যবসা করতেন। সেই ব্যবসা বাদ দিয়ে আপাতত মাছের খামার করছিলেন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না।
তিনি জানান, জাকির আর মিজানুর বন্ধু। জাকির প্রাইভেটকার চালাতেন, আর প্রায়ই মিজানুরকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন এবং তাকেও গাড়ি চালানো শেখাতেন। শনিবার রাতেই তারা দুজন, গাড়ির মালিক ও মালিকের সমন্ধি গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। মালিকের সমন্ধি দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ওইদিন রাতে ফ্লাইট ছিল।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল।
রিয়াদ আরও বলেন, গ্রামের এক রোগী যিনি ড. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে ভর্তি আছেন, তাকে নিয়ে পরদিন গ্রামে ফেরার কথা ছিল জাকির ও মিজানুরের। এরপর কী হয়েছে আমরা জানি না। তবে তাদের মেরে ফেলা হয়েছে, এটা বুঝতে পারছি।
নিহত জাকিরের বাবা কৃষক মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমার ছেলের কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়া নাই। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কারা তাকে মেরেছে তাও জানি না। তবে গত দুই বছর আগে আমেরিকা যাওয়ার জন্য এলাকার এক দালালকে টাকা দিয়েছিলাম। সেই দালাল তাদেরকে নিয়ে এসেছিল ঢাকায় পল্টনে এক ট্র্যাভেল এজেন্সির ফজলু নামে এক ব্যক্তির কাছে। সব মিলিয়ে তখন প্রায় ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এরপর জাকিরকে শ্রীলঙ্কা নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে অবৈধ পথে আমেরিকা পাঠানোর কথা ছিল। তবে তখন সেটি পারেনি। এরপর আরও কিছু টাকা দিয়ে তাকে আমরাই দেশে ফেরত আনি।’
তিনি বলেন, ‘এরপর থেকে ফজলুর কাছে সেই টাকা ফেরত চাইতে গেলে সে কিছুদিন পর টাকা ফেরত দিবে বলে জানায়। এরপর বহুবার তার পেছনে ঘুরেও টাকা ফেরত পাচ্ছিলাম না। এই টাকা চাওয়ার কারণে তারা আমার ছেলেকে একবার মারধরও করেছিল। সবশেষ কিছুদিন আগে এলাকাতে দালালের সঙ্গে কথা হয় এবং স্ট্যাম্পে সই করে যে, চলতি মাসের ১০ তারিখে সেই টাকা ঢাকায় এজেন্সিতে এসে ফেরত দেবে। কিন্তু ওই ১০ তারিখেই জাকিরকে মেরে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনা তারাই ঘটিয়েছে বলে আমাদের ধারণা। তাছাড়া আর কেউ এটি করতে পারে না।’
এর আগে সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরের দিকে মৌচাকের ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাকিংয়ে থাকা প্রাইভেটকার থেকে জাকির ও মিজানুরের মরদেহ উদ্ধার করে রমনা থানা পুলিশ।